কমলগঞ্জ উপজেলার ৫ নং কমলগঞ্জ সদর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত এলাকার উত্তর তিলকপুর গ্রামের দরিদ্র কৃষক পরিবারের ভাই-বোন দুই জন ভয়ঙ্কর জটিল রোগে আক্রান্ত হয়ে ঘরবন্দি অবস্থায় আছেন।
আক্রান্ত ছেলের নাম মো. সিরাজুছ ছালেকিন (১৮) ও মেয়ের নাম মোছা. আবেদা আক্তার রিমা (১৫)। তাদের পিতা মো. ফকরুল ইসলাম (আফরুজ) ও মাতা শিরী বেগম। জন্মের ৩ বছর পর থেকে ভাই-বোন উভয়েই অজ্ঞাত রোগে আক্রান্ত হয়। আক্রান্তের পর চোখের সামনে ছেলে মেয়ের এমন অবস্থা দেখে তাদের বাবা মো: ফকরুল ইসলাম (আফরুজ) তাদেরকে গ্রাম্য কবিরাজের কাছে নিয়ে যান।
অন্ধবিশ্বাসের কারণে ক্রমাগত রোগটি বাড়তে থাকে। মো. সিরাজুছ ছালেকিনের মুখমন্ডল ও শরীরে রোগটি ক্রমাগত বাড়তে থেকে মারাত্মক রূপ ধারণ করে। মোছা. আবেদা আক্তার রিমার রোগটিও বেড়ে গিয়ে মুখ ও শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। তাদের এই অবস্থাতে ঘরের বাইরে বের হওয়া খুবই কষ্টসাধ্য। তাদের মধ্যে কেউই সূর্যের আলো সহ্য করতে পারেন না। ভাই-বোন দীর্ঘদিন যাবত এই ভয়ংকর রোগের সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছে।
আর্থিক অস্বচ্ছলতা ও অজ্ঞতার কারণে অসহায় ফকরুল ইসলাম কোনো সুচিকিৎসা করাতে পারছেন না তাদের। ভালো কোনো ডাক্তারও দেখাতে পারেননি। একদিকে রোগের যন্ত্রণা অন্যদিকে সংসারের অনটনে চিকিৎসার অভাবে যেন তাঁরা মৃত্যুর দিকে এগিয়ে যাচ্ছে ধীরে ধীরে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ৬ ভাই-বোনের মধ্যে ২য় সিরাজুছ ও রিমা ৩য়। ৬ জনের মধ্যে দুজনই বিরল রোগে আক্রান্ত আর ৪ জন সুস্থ। পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি তাদের বাবা মো. ফকরুল ইসলাম (৫০)। কৃষিকাজ করে ৮ জনের সংসার চালানো তার পক্ষে খুবই কষ্টকর। এখন পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি কোনো সহায়তা পায়নি এই অসহায় পরিবার।
প্রথমে সিরাজুছের মুখে একটি ক্ষতচিহ্ন ও সাদা সাদা দাগ দেখা যায়। পরে তা মারাত্মক রূপ ধারণ করে এবং সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ে। সে তরল জাতীয় খাদ্য ছাড়া কিছুই খেতে পারে না। রিমার শরীরে ও মুখে প্রথমে কিছু সাদা সাদা দাগ ছিল । পরে তা পুরো মুখে ও শরীরে ছড়িয়ে পড়ে মারাত্মক কালো রূপ ধারণ করে। এখন সে আলোতে ঠিকমতো তাকাতে পারে না। তখন স্থানীয় ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তারা রোগটি সনাক্ত করতে পারেনি।
স্থানীয়দের পরামর্শে পরবর্তীতে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানে কিছুদিন চিকিৎসা নেওয়ার পর ডাক্তাররা সঠিক রোগটি সনাক্ত করতে না পারায় এবং সুনির্দিষ কিছু না বলায় রোগাক্রান্ত ছেলে-মেয়েকে নিয়ে বাড়িতে চলে আসেন বাবা ফকরুল ইসলাম। এখন মা শিরী বেগম (৪২) ও বড় ভাই শামসুল আরেফিন (২৩) তাদের দেখাশুনা করেন।
এ বিষয়ে রোগাক্রান্ত ছেলেমেয়ের বাবা মো. ফকরুল ইসলাম (আফরুজ) কে জিজ্ঞেস করলে তিনি অসহায়ের মত কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। ছেলেমেয়েদের চিকিৎসার প্রধান সমস্যা অর্থনৈতিক বাঁধা। অভাবের সংসারে নুন আনতে পান্তা ফুরায় এমতাবস্থায় নিজের চোখের সামনে ছেলেমেয়ের আর্তনাদ দেখে যাওয়া ছাড়া আর কিছু করার নেই তার। প্রয়োজনে বাবা মো: ফকরুল ইসলাম (আফরুজ) এর মোবাইল নাম্বার ০১৭৩১-৩৮১৩৬৫